ফোরাত নদীর তীরে সোনার পাহাড় কোথায় এবং কবে ভেসে উঠবে? (2025 সালে ইনশাল্লাহ)

 ফুরাত নদী


ফোরাত নদী 

  • ইমাম মাহদী (আঃ) এর আগমনের পূর্বে ফোরাত নদীর তীরে স্বর্নের পাহাড় ভেসে উঠা কিয়ামতের অন্যতম আলামত। বর্তমানে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই সম্পদের লোভ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। আর তাই আল্লাহ তায়ালা কিছু লোভী প্রকৃতির মানুষকে ফোরাত নদীর তীরে স্বর্নের পাহাড় প্রকাশ করে পৃথিবী থেকে নির্মূল করে দিবেন। মূলত এই আলামতটি আমাদের একেবারেই নিকটবর্তী। কিন্তু আমাদের মাঝে পর্যাপ্ত হাদীসের জ্ঞান না থাকার কারণে, আমরা কেউই বিষয়টি নিয়ে মানুষকে সতর্ক করছি না।
  • ফোরাত নদী কোথায় অবস্থিত? এবং বর্তমানে ফোরাত নদীর অবস্থা কি?

    ফোরাত নদী (Euphrates river) তুরস্ক থেকে সিরিয়ার উপর দিয়ে ইরাকে গিয়ে শেষ হয়েছে।এর দৈর্ঘ্য ২৭০০ কিঃমিঃ এবং এর ৯০%পানির উৎস হল তুরস্কের মুরাত নদী (Murat river) এবং কারাসু নদী ( karasu river) । তুরস্কের বিরেচিক ,সিরিয়ার রাক্কা প্রদেশ, দেইর আজ জুর, মাদায়েন, আবু কামাল ইরাকের আল কায়েম, হাদিথা, রামাদি, ফালুজা, নাজাফ, নাসিরিয়া, কুফা শহর গুলো মূলত এই ফোরাত নদীর উপরেই নির্ভরশীল। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে তুরস্ক, সিরিয়া ও ইরাক সরকার এখন পর্যন্ত ১২ টি ছোট বড় বাধ নির্মাণ করার কারনে ১৯৯৯ সালের পরে ফোরাত নদীর পানি আশংকাজনক হারে কমতে শুরু করেছে। হাদীসে বলা হয়েছে, ফোরাত নদীর পানি শুকিয়ে স্বর্নের পাহাড় আবিষ্কৃত হবে। বর্তমান অবস্থার সাথে মিলিয়ে দেখলে বুঝা যায়, সেটি খুব বেশি দূরে নয়।কারন Global water forum এর গবেষণায় দেখা গেছে, ফোরাত নদীর পানি খুব দ্রুত কমে যাচ্ছে
  • ফোরাত নদীর তীরে সোনার পাহাড় কি ইতোমধ্যেই প্রকাশ পেয়েছে?
    ------------------------------------------------------------------------------
    ফোরাত নদীর তীরে সোনার পাহাড় প্রকাশ পাওয়া সংক্রান্ত হাদিস সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকায় বর্তমানে অনলাইনে কিছু নামদারি গবেষক বলতে শুরু করেছেন, স্বর্নের পাহাড় নাকি ইতোমধ্যেই প্রকাশ পেয়েছে? যাদের মধ্যে শাইখ ইমরান নজর ও তার অনুসারীরা অন্যতম। যদিও আরব বিশ্বের কোন ইসলামিক স্কলারদের কেউ এখন পর্যন্ত এরকম উদ্ভট ব্যাখ্যা করেননি। তাদের যুক্তি হল, বর্তমান বিশ্বে তেলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি, আর তৈলকে যেহেতু (Black gold) বলা হয়ে থাকে, তাই তৈল, গ্যাস এসবই হল হাদীসে বর্নিত সোনার পাহাড়। আর তাদের এসব যুক্তি যে, একেবারেই বানোয়াট ও মূর্খের পর্যায়ে পড়ে তা বিশ্লেষণ করা হলঃ

    ১, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর হাদীসে তৈল সংক্রান্ত কিছু বোঝাতে তিনি "কাফিসু"(قفيز) শব্দটি ব্যবহার করেছেন। টাকা পয়সার জন্য "দিরহাম" (درهم) শব্দটি ব্যবহার করেছেন। আর স্বর্নের জন্য "জাহাবুন" (ذهبن من جبل) শব্দটি ব্যবহার করেছেন।

    (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং - ৭০১৩ ইঃফাঃ)

    তাই যেখানে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) স্বর্নের পাহাড় বোঝাতে "জাহাবুন মিন জাবাল" বলেছেন, সেখানে হাদীসের ইংরেজী অনুবাদ পড়ে Gold কে আবার black gold ভেবে তৈলের সাথে তুলনা করা মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই না।

    ২, ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় ভেসে উঠবে প্রথম সুফিয়ানীর উত্থানের পর, যেহেতু এখনও প্রথম সুফিয়ানীর উত্থান হয়নি, তাই স্বর্নের পাহাড় প্রকাশ পেয়েছে এরকম সকল ব্যাখ্যা বাতিল বলে গণ্য হবে।

    ৩, স্বর্নের পাহাড় ভেসে উঠবে সিরিয়ার ফিতনা ১২ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর রমজান মাসে। তাই এখনই স্বর্নকে তৈল বানিয়ে ব্যাখ্যা করা পাগলামি ছাড়া আর কিছুই না।

    ৪, স্বর্নের পাহাড় কে কেন্দ্র করে যে যুদ্ধ হবে তাকে বলা হয়েছে "কিরকিসিয়ার যুদ্ধ" এবং এই যুদ্ধে কেবলমাত্র তিনটি পক্ষ থাকবে। তুরস্ক, রোম (আমরিকা), এবং সুফিয়ানী। তাই এই যুদ্ধকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কিংবা আমাক প্রান্তের মালহামা মনে করাও বোকামি।

    ৫, স্বর্নের পাহাড় দখল করতে আসা তুরস্ক, আমরিকা ও সুফিয়ানীর ৯৯% যোদ্ধা নিহত হবে। যার সর্বমোট সংখ্যা হবে ১ লক্ষ কিংবা ১ লক্ষ ৬০ হাজার। তাই স্বর্নের পাহাড় দখলের জন্য যে যুদ্ধ হবে সেখানে কোটি কোটি মানুষ মারা যাবে এরকম ব্যাখ্যা করাও বোকামি।



    • স্বর্নের পাহাড় কবে ভেসে উঠবে? (২০২৩ সালে ইনশাল্লাহ)
      -----------------------------------------------------------------------------
      ** বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত তিনি বলেন, চতূর্থ ফিৎনা হচ্ছে, অন্ধকার অন্ধত্বপূর্ন ফিৎনা। যা সমুদ্রের ঢেউয়ের ন্যায় উত্তাল হয়ে উঠবে, আরব অনারবের কোনো ঘর বাকি থাকবেনা, যেখানে উক্ত ফিৎনা প্রবেশ করবেনা? এই ফিতনা দ্বারা মুসলমানেরা লাঞ্ছিত অপদস্ত হতে থাকবে। ফিৎনাটি শাম দেশে (সিরিয়ায়) চক্কর দিতে থাকলেও রাত্রিযাপন করবে ইরাকে। তার হাত পা দ্বারা আরব ভুখন্ডের ভিতরে বিচরন করতে থাকবে। উক্ত ফিৎনা এ উম্মতের সাথে চামড়ার সাথে চামড়া মিশ্রিত হওয়ার ন্যায় মিশে যাবে, তখন বালা মুসিবত এত ব্যাপক ও মারাত্নক আকার ধারন করবে যা দ্বারা মানুষ ভালো খারাপ নির্ণয় করতে পারবেনা। ঐ মুহুর্তে কেউ উক্ত ফিৎনা থামানোর  সাহস ও রাখবেনা। একদিকে একটু শান্তির সুবাতাস বইলেও অন্যদিকে ফিৎনা তীব্র আকার ধারন করবে। সকালবেলা কেউ মুসলমান থাকলেও সন্ধা হতে হতে সে কাফের হয়ে যাবে। উক্ত ফিৎনা থেকে কেউ বাঁচতে পারবেনা। কিন্তু শুধু ঐ লোক বাঁচতে পারে, যে সমুদ্রে ডুবন্ত ব্যক্তির ন্যায় করুন সুরে আকুতি জানাতে থাকে। সেটা প্রায় ১২ বৎসর পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে এবং এক পর্যায়ে সকলের কাছে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে উঠবে। ইতোমধ্যে ফুরাত নদীতে স্বর্নের একটি ব্রিজ (পাহাড়) প্রকাশ পাবে। যা দখল করার জন্য সকলে যুদ্ধে জড়িয়ে যাবে এবং প্রতি নয় জনের সাতজন মারা পড়বে।

      [ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৬৭৬ ]

      হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন চতূর্থ ফিতনা বা যুদ্ধ ১২ বছর স্থায়ী হবে। যখন অবসান হবে তখন অবসান হবে। ( অর্থাৎ ১২ বছর সময় শেষ হবে তারপর) স্বর্ণের পাহাড় থেকে ফুরাতকে খুলে দেওয়া হবে। অতপর তার উপর প্রত্যেক নয় জনের সাত জনকে হত্যা করা হবে।

      [ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯৭০ ]

      আল্লাহ আকবর আমরা সবাই জানি চতুর্থ ফিতনা বা, সিরিয়া যুদ্ধ শুরু হয়েছে ২০১১ সালে। আর বর্তমান অবস্থা ১২ বৎসর স্থায়ী থাকবে, তারপর ফোরাত নদীর তীরে সোনার পাহাড় ভেসে ওঠবে। অর্থাৎ ২০১১+১২ =২০২৩ সালের রমজান মাসে (অর্থাৎ ২০২৩ সালের ২২ ই মার্চ থেকে ২০ ই এপ্রিলের মধ্যে) ইনশাআল্লাহ।

      তবে কিতাবুল ফিতানের ৯৭২ নং হাদীসে বলা হয়েছে, চতুর্থ ফিতনা ১৮ বছর স্থায়ী থাকবে তারপর ফোরাত নদীর তীরে সোনার পাহাড় ভেসে উঠবে। এই মতটি গ্রহন করেছেন, লেবাননের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা আলী আল কুরানী। তিনিও বলেছেন চতুর্থ ফিতনা ১৮ বছর স্থায়ী থাকবে তারপর ফোরাত নদীতে সোনার পাহাড় ভেসে উঠবে। অর্থাৎ ২০১১+১৮ =২০২৯ সালে। কিন্তু আমি ব্যক্তিগত ভাবে সুফিয়ানী ও মাহদীর উত্থান নিয়ে ব্যাপক গবেষণার পর মনে করি, চতুর্থ ফিতনা ১২ বছর স্থায়ী থাকবে এই মতটি বেশি গ্রহণযোগ্য।
    •  বিজ্ঞাপন




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ